Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসাশ্রয়ী শস্যবিন্যাসের মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা

বরেন্দ্র অঞ্চলে পানিসাশ্রয়ী শস্যবিন্যাসের মাধ্যমে
ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা
ড. মো. হোসেন আলী১ পার্থ বিশ্বাস২
দেশের অন্যান্য অঞ্চলের চেয়ে বরেন্দ্র অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। এ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় যে পরিমাণ পানি পাম্পের সাহায্যে উত্তোলন করা হচ্ছে; সে পরিমাণ পানি ভূগর্ভস্থ স্তরে পুনরায় ভরাট বা রিচার্জ হচ্ছে না। এ অবস্থা চলতে থাকলে এমন এক সময় আসবে যখন গভীর নলকূপের সাহায্যেও আর পানি পাওয়া যাবে না। ফলে ভবিষ্যতে পানির অভাবে পরিবেশের বিপর্যয় হতে পারে। জলবায়ু পরিবেশগত টেকসই ব্যবস্থাপনা অর্জনের জন্য ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এ যে মূল ৬টি হটস্পট বিবেচনা করা হয়েছে তার মধ্যে “বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল” অন্যতম। পানি সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং পানি সম্পর্কিত প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ ব-দ্বীপ পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য (বাংলাদেশ ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০: সংক্ষিপ্ত সার)। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ এর রূপকল্প হচ্ছে “নিরাপদ, জলবায়ু পরিবর্তনে অভিঘাতসহিষ্ণু সমৃদ্ধশালী ব-দ¦ীপ গড়ে তোলা” এবং অভিলক্ষ্য হচ্ছে “দৃঢ়, সম্বন্বিত ও সময়ের সাথে পরিবর্তনশীল কার্যকরী কৌশল অবলম্বন এবং পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনায় ন্যায়সঙ্গত সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত অভিঘাত এবং অন্যান্য ব-দ্বীপ সংক্রান্ত সমস্যা মোকাবিলা করে দীর্ঘমেয়াদে পানি ও খাদ্য নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও পরিবেশগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ”। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০-এ যে ছয়টি ব-দ্বীপ সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট অভিষ্ট নির্ধারণ করা হয়েছে তার মধ্যে অভীষ্ট ২ এবং অভীষ্ট ৬ পানির সুষ্ঠু ব্যবহারের সাথে সংশ্লিষ্ট। পানি ব্যবহারের প্রধান প্রধান খাতগুলো বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, সবচেয়ে বেশি পানি ব্যবহৃত হয় কৃষিখাতে যা মোট ব্যবহারের প্রায় ৭০ শতাংশ। বরেন্দ্র অঞ্চলেও এর ব্যতিক্রম নয় এবং বাসাবাড়ি (১০%) ও শিল্প কারখানা (২০%) সহ প্রায় সবটাই উত্তোলন করা হয় ভূগর্ভস্থ উৎস হতে। নাচোল ও নিয়ামতপুর উপজেলার বিগত ৪০ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা যায় যে, এই এলাকায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বছরে প্রায় ১-১.৫ ফুট হারে নিচে নেমে যাচ্ছে এবং বৃষ্টিপাতের ক্রমধারা (ঢ়বঃঃবৎহ) সুষম নয়। দেশের গড় বৃষ্টিপাতের তুলনায় এই অঞ্চলে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত প্রায় অর্ধেক। এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের জন্য আমাদের এমন ভাবে পানি উত্তোলন করতে হবে - যেন পানির স্তর বেশি নিচে চলে না যায়, অর্থাৎ ভারসাম্য বজায় থাকে। তাই স্থানীয় চাষাবাদ পদ্ধতি ও পানি ব্যবহারের বিষয়টিকে বিশ্লেষণ করে টেকসই  কৃষি উৎপাদন এবং আর্থসামাজিক চাহিদা বিবেচনায় নাচোল, চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং নিয়ামতপুর, নওগাঁ এই দুইটি স্থানে পরপর তিন বছর (২০১৮-২০২০) গবেষণার মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ পানিসম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে পানি সাশ্রয়ী শস্য পরিক্রমা উদ্ভাবন করা হয়েছে। ব-দ্বীপ পরিকল্পনা ২১০০ অনুসারে  অন্যতম হটস্পট ‘বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চল’ এর আওতায় যে ১৮টি জেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, সে জেলাগুলোতে বা অনুরূপ স্থানে এই ব্যবস্থাপনার প্রয়োগ করা যেতে পারে।  
স্থানীয় চাষাবাদ পদ্ধতি এবং নতুন পদ্ধতি
অধিকাংশ জমিতে ‘আমন-পতিত-বোরো’ শস্য পরিক্রমা অনুসরণ করে বছরে দুটি ফসল চাষাবাদ করা হয়ে থাকে। স্থানীয় কৃষকরা সাধারণত দীর্ঘ জীবনকালের আমন ধান চাষ করেন এবং আমন কাটার পর প্রায় ২-৩ মাস জমি পতিত রেখে পরে দীর্ঘ জীবনকালের রোরো ধান চাষাবাদ করেন। ফলে তারা আমন ধানে আংশিক (৪-৬টি) সেচ ও বোরো ধানে সম্পূর্ণ সেচের (১২-১৪টি) জন্য ভূগর্ভস্থ পানির উপর নির্ভরশীল। পানি সাশ্রয়ের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ‘আমন-পতিত-বোরো’ শস্য পরিক্রমা (ব্যবস্থাপনা-৫) এর বোরো ধানকে বাদ দিয়ে আউশ নির্ভর ৩টি এবং স্বল্প জীবনকালীন উচ্চফলনশীল বোরো নির্ভর ১টি নতুন শস্য পরিক্রমা/ব্যবস্থাপনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (টেবিল-১)। নতুন আউশ নির্ভর ৩টি শস্য পরিক্রমা/ব্যবস্থাপনা যথাক্রমে-ব্যবস্থাপনা-১ (আমন-সরিষা-আউশ), ব্যবস্থাপনা-২ (আমন-মসুর-আউশ)  ও ব্যবস্থাপনা-৩ (আমন-গম-আউশ) এবং নতুন স্বল্প জীবনকালীন উচ্চফলনশীল বোরো নির্ভর ১টি হলো ব্যবস্থাপনা-৪ (আমন-সরিষা-বোরো)। উল্লেখ্য, ব্যবস্থাপনা-৪ (আমন-সরিষা-বোরো) এ স্বল্প জীবনকালীন উচ্চফলনশীল বোরো হিসাবে ব্যবহৃত জাত, বিনা উদ্ভাবিত বিনাধান-১৪।
ধান-সমতুল্য ফলন এবং আয়-ব্যয় অনুপাত
ধান-সমতুল্য ফলন বলতে বোঝায় যে, ধান ব্যতীত অন্যান্য ফসল যেমন : গম, সরিষা অথবা মসুর এর ফলনকে ঐ সময়ের বাজার মূল্যে রূপান্তরিত করে তা দ্বারা যে পরিমাণ ধান পাওয়া যায়। অর্থাৎ ধান-সমতুল্য ফলন (টন/হেক্টর) = [ধান ব্যতীত অনান্য ফসলের ফলন (টন/হেক্টর) দ্ধ ঐ ফসলের বাজার মূল্য (টাকা/টন)] স্ট ধানের বাজার মূল্য (টাকা/হেক্টর)। বিদ্যমান শস্য পরিক্রমা ‘আমন-পতিত-বোরো’ (ব্যবস্থাপনা-৫) এর তুলনায় নতুন ৪টি শস্য পরিক্রমা (ব্যবস্থাপনা-১ হতে ব্যবস্থাপনা-৪) কীভাবে পানিসাশ্রয়ী এবং লাভজনক তা হিসাব করার জন্য সম্পূর্ণ উৎপাদন খরচ এবং স্থানীয় শস্যের বাজার মূল্যসহ আনুসঙ্গিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আয়-ব্যয় অনুপাত, বিঘা/হেক্টরপ্রতি প্রকৃত আয়, শতকরা ফলন বৃদ্ধি ও পানি সাশ্রয় প্রকাশ করা হয় (টেবিল-১)।
ব্যবস্থাপনা/প্রযুক্তির বর্ণনা
গতানুগতিক আমন-বোরো দুই ফসলি শস্য পরিক্রমার পরিবর্তে আমন-রবি-আউশ পরিক্রমায় সেচের পানি তুলনামূলক কম লাগে। উচ্চফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন আমন ধান (যেমন : বিনাধান-৭, বিনা ধান-১৭, বিনাধান-২২ অথবা ব্রি ধান৭১) কাটার পর রবি মৌসুমে বিনা সেচে মসুর (যেমন : বিনামসুর-৮), একটি বা দুইটি সেচে সরিষা (বিনাসরিষা-৯, বিনাসরিষা-১০ অথবা বারি সরিষা-১৪) এবং গমের ক্ষেত্রে (বারি গম-৩৫, বারি গম-৩৩ বা বারি গম-২৬) ২-৩টি সেচের মাধ্যমে ভালো ফলন পাওয়া সম্ভব। গম কাটার পর বা সরিষা/মসুর তোলার পর আউশ ধান “বিনাধান-১৯ বা বিনাধান-২১” লাগালে ৩-৪টি সেচই যথেষ্ট- যা চারা রোপণ হতে ফুল আসা পর্যায়ের পূর্ব পর্যন্ত দিতে হয় এবং বাকি সময়ে প্রাকৃতিক বৃষ্টির মাধ্যমে পানির চাহিদা পূরণ হয়। চাষকৃত আউশ ধানের ফলন প্রায় ৪.৭৯ টন/হেক্টর। সেচের পানির চাহিদা অনেকটা বৃষ্টির পানি দ্বারা পূরণ হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনের প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে কম হয়। ফলে বোরো ধানের পরিবর্তে রবি ও আউশ শস্য চাষ করায় গভীর নলকূপের পানি কম উত্তোলন করার প্রয়োজন হয়, যা পরিবেশ বান্ধব। অন্যদিকে বছরান্তে মোট ফলন (ধান-সমতুল্য) বেশি হয় এবং নিট মুনাফা বা          প্রকৃত আয়ও বেড়ে যায় (টেবিল-১)।
এ ছাড়াও দীর্ঘ জীবনকালীন ‘আমন-পতিত-বোরো’ দুই ফসলি শস্য পরিক্রমার পরিবর্তে ‘আমন-সরিষা-বোরো’ শস্য পরিক্রমার মাধ্যমে ফসলের নিবিড়তা বৃদ্ধিসহ সেচ পানির সাশ্রয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে উচ্চফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন আমন ধানের পাশাপাশি বিনা উদ্ভাবিত বোরো ধান (বিনাধান-১৪) ব্যবহার করতে হবে। কারণ বিনাধান-১৪ উচ্চফলনশীল ও স্বল্প জীবনকালীন বোরো ধানের জাত (ব্রাউশ/লেট বোরো) এবং গবেষণায় দেখা যায় স্থানীয় চাষাবাদকৃত বোরো ধানের চেয়ে  ২-৩ সেচ কম প্রয়োজন হয়।
প্রযুক্তি থেকে লাভ
ব্যবস্থাপনা-৫ (আমন-পতিত-বোরো) এর তুলনায় আউশনির্ভর ব্যবস্থাপনা-১ (আমন-সরিষা-আউশ), ব্যবস্থাপনা-২ (আমন-মসুর-আউশ) এবং ব্যবস্থাপনা-৩ (আমন-গম-আউশ) অনুসরণ করলে প্রায় ১০-১৯ শতাংশ ধান সমতুল্য ফলন বৃদ্ধিসহ ৫০-৫৯ শতাংশ সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব। ব্যবস্থাপনা-৫ (আমন-পতিত-বোরো) এর তুলনায় ব্যবস্থাপনা-৪ [আমন-সরিষা-বোরো (বিনাধান-১৪)] অনুসরণ করলে প্রকৃত আয় প্রায় ৫২ শতাংশ বৃদ্ধিসহ ২৫ ভাগ সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব (টেবিল- ১)। বরেন্দ্র অঞ্চলের একটা পাম্পের আওতায় বিদ্যমান জমি সাধারনত সমতল নয় বরং উঁচু, মাঝারি ও নিচু এই তিন ধরনের। এখানকার মাটি সাধারণত এটেল-দোঁ-আশ। তাই যে সমস্থ জমিগুলো নিচু সেখানে ব্যবস্থাপনা-৪ [আমন-সরিষা-বোরো (বিনাধান-১৪)] এবং বাকি জমিগুলোতে ব্যবস্থাপনা-১, ব্যবস্থাপনা-২ এবং ব্যবস্থাপনা-৩  সমন্বিতভাবে অনুসরণ করলেও প্রকৃত আয় বৃদ্ধির পাশাপাশি সেচের পানি সাশ্রয় করা সম্ভব।
সুতরাং বরেন্দ্র ও খরাপ্রবণ অঞ্চলে বোরো ধানের পরিবর্তে রবি ফসল: সরিষা, মসুর বা গম এবং আউশ ধান চাষ করলে সেচের পানির পরিমাণ কম লাগে, বছরান্তে মোটফলন (ধান সমতুল্য) বেশি হয় এবং নিট মুনাফাও বেশি পাওয়া যায়; পাশাপাশি পানি সম্পদের টেকসই ব্যবহার এবং পানি সংশ্লিষ্ট প্রাকৃতিক বিপর্যয় রোধ করে পরিবেশগত স্থিতিশীলতা অর্জন সম্ভব।
লেখক : ১মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, ২বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা, কৃষি প্রকৌশল বিভাগ, বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা), ময়মনসিংহ; মোবাইল : ০১৭২৭৬৫৬২১৬, ই-মেইল: parthi.biswas@gmail.com


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon